আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি সিনেমার গল্পের মতো একটা জীবন কাটানোর, দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর, ভালো খাবার খাওয়ার বা জামা সুন্দর জামা কাপড় পড়ার। এই সব স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্যে প্রয়োজন অনেক অনেক টাকা রোজগার করার। কেবলমাত্র চাকরির টাকা দিয়ে এত স্বপ্ন পূরণ করা আজকের দিনে সম্ভব নয়। এরজন্যে প্রয়োজন একাধিক রোজগারের পথ, আর সেই পথই দেখায় প্যাসিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকাম কী?
এটা হল আয়ের এমন একটা উপায় যেখানে আপনাকে প্রতিদিন নিজেকে কাজ করতে হয় না। একবার সঠিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যবসাটিকে দাঁড় করাতে পারলে, এটি নিয়মিত আয়ের রাস্তা তৈরি করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ – বাড়ি বা গাড়ি ভাড়ার টাকা, ডিভিডেন্ড, রয়্যালটি ইত্যাদি।
ভাবুন তো, আপনি ঘুমাচ্ছেন, অথচ আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে। এটাই হলো প্যাসিভ ইনকাম।
আজকের দিনে প্যাসিভ আয় কেন দরকার?
• একাধিক উপায়ে রোজগারের প্রয়োজনীয়তাঃ একটা রোজগারের উপরে সবটা নির্ভর করলে, যেদিন সেই আয়ের পথটি থাকেনা, তখন আপনাকে পথে বসতে হবে।
• চাকরির অনিশ্চিতাঃ বেসরকারি চাকরি আজ আছে, কাল নেই। অনেক সরকারি চাকরিতেও আজকাল টার্গেটের চাপ। প্যাসিভ ইনকাম থাকলে দুশ্চিন্তা কমে।
• অতিরিক্ত আয়ের সহায়তা: মাসের শেষে যখন খরচ বেশি হয়, তখন এই আয় ভরসা দেয়।
• অবসরের শান্তি: বয়স বাড়লে কাজের চাপ কমাতে চাইবেন, বা খাটনির ক্ষমতা কমবে। তখনও আয়ের ধারা বজায় থাকবে।
• স্বাধীনতা: একাধিক আয়ের উৎস থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা বাড়ে। টাকা খাটানোর ক্ষেত্রেও চালিয়ে খেলতে পারবেন।
আপনার জন্য প্যাসিভ ইনকামের সেরা ৫টি আইডিয়া –
১. ভাড়ার মাধ্যমে আয় (Rental Income)
কলকাতার নিউ টাউন বা সল্টলেকের মতো জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা সহজেই আসতে পারে। এই বাড়ি বা ফ্ল্যাটে একবার ডাউন পেমেণ্ট করে তার মালিকানা নিন। তারপরে, ইএমআইয়ের মাধ্যমে ধার পরিশোধ করুন। এই মাসিক কিস্তির টাকা কামিয়ে নিতে পারেন ভাড়ার টাকা থেকেই। এক পরিচিত দম্পতি শিলিগুড়িতে বাড়ির একতলা ভাড়া দিয়ে তাদে’র ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন—এটাই প্যাসিভ ইনকামের শক্তি।
২. কৃষিজ পণ্য ও চা ব্যবসা
দার্জিলিংয়ের চা বা নদিয়ার জৈব সবজি—এগুলোর চাহিদা সবসময় থাকে। মনে করুন, আপনার ছোট্ট জমি আছে। সেখানে মৌমাছি পালন শুরু করলে, মধু বিক্রি করে নিয়মিত আয় আসতে পারে। গ্রামের দিকে এখনও সস্তায় জমি পাওয়া যায়। আপনাকে একজন ম্যানেজার রাখতে হবে, যিনি আপনার অবর্তমানে জমি ও চাষের দেখভাল করবেন। জৈব চাষ, গোটারি, পোল্ট্রি বা ফিশারির ব্যবসায় আপনি খুব তাড়াতাড়ি লক্ষ্মীলাভের সুযোগ হয়।
৩ মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ার মার্কেট
প্রতিদিন বাজার দেখার দরকার নেই। SIP-এ মাসে ৫০০ টাকা থেকেও শুরু করা যায়। আমার এক ছাত্র বন্ধু মাত্র ৫ বছর আগে SIP শুরু করেছিল, এখন তার বিনিয়োগ দ্বিগুণের কাছাকাছি। ধৈর্যই এখানে মূল চাবিকাঠি।
৪ হস্তশিল্প ও জুট পণ্য অনলাইন বিক্রি
মুর্শিদাবাদের শাড়ি, বীরভূমের টেরাকোটা, হুগলির জুট ব্যাগ—সবকিছুরই অনলাইন বাজার আছে। এক গৃহবধূ হাওড়া থেকে নিজের বানানো জুট ব্যাগ Amazon-এ বিক্রি শুরু করেছিলেন, এখন মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
৫ ডিজিটাল কনটেন্ট ও অনলাইন কোর্স
বাংলায় ইউটিউব চ্যানেল খুলে রান্না, গান বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ভিডিও বানালে বিজ্ঞাপন থেকে আয় আসতে পারে।
ক্যামেরার সামনে আসতে লজ্জা পান? মুখ দেখাতে ভয় লাগে, এই ভেবে যে কে কি বলবে? খুব সহজে বানান “ফেসলেস ভিডিও” (যেখানে মুখ দেখাতে হয় না)।
নিজেকেই প্রশ্ন করুন, কোন বিষয়ে আপনার জ্ঞান সবচেয়ে বেশি? সেই বিষয়েই শুরু করুন অনলাইন কোচিং। এক তরুণ শিক্ষক মালদা থেকে অনলাইনে গণিত শেখাচ্ছেন, আর তার ভিডিও থেকে মাসে কয়েক হাজার টাকা পাচ্ছেন।
তবে সব শেষে একটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্যাসিভ ইনকাম মানে কিন্তু একদিনে ধনী হওয়া নয়। এটা হলো ধীরে ধীরে আর্থিক স্বাধীনতা তৈরি করা। পশ্চিমবঙ্গের মতো জায়গায়, যেখানে সংস্কৃতি, কৃষি আর শিল্প একসাথে মিশে আছে, সেখানে সুযোগের অভাব নেই।
ছোট থেকে শুরু করুন—হয়তো একটি ঘর ভাড়া দিয়ে, কিম্বা মাসে ৫০০ টাকা SIP-করে আপনি শুরু করলেন। সময়ের সাথে সাথে দেখবেন, এই ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনাকে বড় আর্থিক নিরাপত্তা এনে দেবে।
Leave a Reply